অরিত্রি আর একটি চাপা কান্না

বাড়িতে নতুন সন্তান এসেছে । নানি সবাইকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন। বাবা ঘরে ঢুকেই প্রথম কথা বললেন , ওকে আমি ডাক্তার বানাবো , মা বললেন , না ইঞ্জিনিয়ার ।

বাচ্চার মাত্র একদিন বয়স , এর মধ্যে তৈরি হয়ে গেলো বাংলাদেশের ভবিষ্যত ইঞ্জিনিয়ার আর ডাক্তার ।

বড়ো হলো সন্তানটি । কোচিং এর চাপে আর স্কুলের যাঁতাকলে ফিকে হয়ে গেলো সোনালি শৈশব , দামি স্কুলের সম্মানী দিতে দিতে বাবা-মায়ের প্রাণ ওষ্ঠাগত ।

এরপর ৭ টি ভাষায় যে মেয়েটি কথা বলতে পারতো , একদিন নিজেই শান্ত হয়ে গেলো। ঘরের কোণে টিয়ে পাখিটি আর কাঁদে না , বলে না অরিত্রি ঘুম থেকে উঠো ।

দোষ কার ? অভিভাবকদের , স্কুলের না শিক্ষা ব্যবস্থার ?

আমি বলবো সবার। সমাজ আমাদের বাচ্চাদের শেখায়নি জীবনের মূল্য কি ! কই বিদেশে তো কোনো শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে শুনিনি।

অভিভাবকদের বা স্কুল কর্তৃপক্ষের মিথ্যা অহংবোধ ঠেলে দিয়েছে বাচ্চাদেরকে ফাঁসির দড়ি নিজের গলায় ঝোলাতে।

স্কুল শিক্ষকদেরকে বলব , আপনারা আপনাদের কোচিং দস্যুতা ছেড়ে দিন। আপনারা পড়ালেখাকে ব্যবসা বানিয়ে বসে আছেন। স্কুলে যেখানে ক্লাশে তিরিশজন থাকার কথা, গড্ডলিকা প্রবাহের মতো ৮৩ জনকে ঢুকিয়েছেন । কথায় কথায় “টি সি“ দেয়ার ভয় দেখিয়ে বাচ্চাদেরকে মানসিক রোগী বানিয়ে ফেলছেন।

শিক্ষা বোর্ডকে কিছু বলার আগে আমার ঐ কাহিনি মনে পড়ল।

এক আমেরিকান গর্ব করে এক বাঙালিকে বলল , জান, আমাদের একটি মেশিন আছে, আমরা একপাশ দিয়ে গরু-ছাগলকে ঢোকাই, অন্যদিকে সসেজ আর কাটলেট বেরিয়ে আসে।

বাঙালি বলল, এতে আশ্চর্যের কি আছে, আমরা আমাদের জিপিএ ৫ পাওয়া ছেলে-মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকাই , চার- পাঁচ বছর পরে ওরা গরু-ছাগল হয়ে বের হয়ে আসে।

এখন হয়তো কয়েকজন পণ্ডিত কমেন্ট করবেন, আমাদেরকে এভাবে হেয় করবেন না।

আপনি হয়তো কোনো সাবজেক্টে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছেন, অথচ বাসার বেসিনটি, বাথরুমের টাইলসটি নষ্ট হয়ে গেলে নিজে সারাতে পারেন না, এর জন্য মিস্ত্রি ডাকতে হয়।

টকশোতে বড় বড় ইংরেজি শব্দ কপচাচ্ছেন, অথচ কোনো সমস্যারই সমাধান নেই আপনার কাছে, এটা আমি রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সব বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশে বলছি।

আর আইনের শাসন যেখানে নীরবে নিভৃতে কাঁদে , কিশোর-কিশোরীদের চাপা কান্না সমাজ কি কোনোদিন শুনতে পাবে ?

তারিক হক, ৫/১২/১৮

Share This